সোমবার, ০৬ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:২৩ অপরাহ্ন
বাবুগঞ্জ প্রতিনিধি:বাবুগঞ্জে ভূমি সংক্রান্ত ভয়াবহ জাল-জালিয়াতি ও অবিশ্বাস্য প্রতারণার একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সন্ধান পাওয়া গেছে। সরকারি বিভিন্ন খাসজমি নামে বেনামে দখল ও বিক্রি করা ছাড়াও এবার চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর জাল করে ওয়ারিশ সার্টিফিকেট তৈরি করে ভুয়া লোক দাঁড় করিয়ে ১৬ বছর ধরে বসবাস করে আসা তিনটি পরিবারের বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ ৪৫ শতাংশ জমি দলিল করে নিয়েছে ওই প্রতারক চক্রটি। এসব অভিযোগে ওই প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে আদালতে ইতোমধ্যে দায়ের হয়েছে দুইটি মামলা। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে জমি সংক্রান্ত এসব ভয়ঙ্কর জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণার অবিশ্বাস্য ঘটনা।
সরজমিনে জানা যায়, বাবুগঞ্জ উপজেলার দেহেরগতি ইউনিয়নের রাকুদিয়া মৌজার ২১৩৬ নম্বর খতিয়ানের ৭১৭৯ নং দাগের ৪৫ শতাংশ জমি বিগত ২০০২ সালে ক্রয় করেন রাকুদিয়া গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন এবং গৌরনদীর শরিকল গ্রামের মাহাবুব গাজী ও সেলিম রেজা নামের তিন ব্যক্তি। তারা জমির মূল মালিক তিন সহোদর কুদ্দুস হাওলাদার, খোকন হাওলাদার ও হারুন হাওলাদারের কাছ থেকে সাবকবলা দলিল মূলে ১৬ বছর আগে ওই সম্পত্তি ক্রয় করেন। পরে তারা তিনজন সেই জমিতে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস শুরু করেন এবং মিউটেশন ও মাঠজরিপের মাধ্যমে তিনজনে ১৫ শতাংশ করে মোট ৪৫ শতাংশ জমি যার যার নামে নিজ নামে রেকর্ড করান। ২০০২ সালে রাকুদিয়া গ্রামের ওই জমির তেমন কোনো গুরুত্ব না থাকলেও দোয়ারিকা-শিকারপুর ব্রিজ চালু হওয়ার পরে প্রেক্ষাপট বদলে যায়। নতুন বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের পাশে রাকুদিয়ার গ্রামের নতুন হাট সংলগ্ন ওই জমির উপর লোলুপ দৃষ্টি পড়ে স্থানীয় রাকুদিয়া গ্রামের চিহ্নিত দখলবাজ ও ভূমিদুস্য শাহ আলমের। ভূমিদস্যু শাহ আলমের নেতৃত্বে রাকুদিয়া গ্রামের ভয়ঙ্কর চিটার হিসেবে পরিচিত কামরুল হাসান প্রিন্স ওরফে পলাশ তামিদার ও আনিচ আকন নামের সংঘবদ্ধ একটি প্রতারক চক্র ওই বাজারের ওপরে মূল্যবান হয়ে ওঠা জমিটি দখলের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে।
এরই ধারাবাহিকতায় প্রথম তারা জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে কিছু ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে। দেহেরগতি ইউনিয়নের শ্যামল চকিদার ও ৪ নং ওয়ার্ডের শাহিন মেম্বারের যোগসাজসে তারা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে একটি জাল ওয়ারিশ সার্টিফিকেট তৈরি করে। ওই ওয়ারিশ সার্টিফিকেটে চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরও জাল করে প্রতারক চক্র। ওয়ারিশ সার্টিফিকেটে তারা বানারীপাড়া উপজেলার গাভা এলাকায় বসবাসরত জনৈক উজ্জ্বল সমাদ্দার, খোকন সমাদ্দার ও রোকন সমাদ্দারকে ওই জমির ভুয়া ওয়ারিশ সাজিয়ে গতবছরে ২০১৭ সালের ২৬ ডিসেম্বর রহমতপুর সাব রেজিস্ট্রি অফিস থেকে কামরুল হাসান প্রিন্স ও আনিচ আকনের নামে ওই ৪৫ শতাংশ জমি দলিল করে প্রতারকচক্র। ওই জমিতে ১৬ বছর ধরে ভোগদখল করা তিন পরিবারের বসতঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকলেও দলিলে সম্পূর্ণ ৪৫ শতাংশ জমিকেই নাল বলে দেখানো হয়। ৩০২১ নম্বরের ওই দলিলে স্থানীয় যে স্বাক্ষীর নাম ঠিকানা দেখানো হয় তারাও ভুয়া বলে জানান জমির মালিক জসিম উদ্দিন। অনুসন্ধানে ওই দলিলের দাতা এবং স্বাক্ষী মান্নান হাওলাদার মোল্লা নামের কাউকেই সেখানে পাওয়া যায়নি।
রাকুদিয়া এলাকার স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মাঝি মাসুম রেজা ও নতুন হাটের ব্যবসায়ী আল-আমিন জানান, দলিল দাতা উজ্জ্বল সমাদ্দার, খোকন সমাদ্দার ও রোকন সমাদ্দার নামে রাকুদিয়া গ্রামে কোনো মানুষ নেই। কখনো এই নামে কেউ এখানে বসবাস করেনি। মান্নান হাওলাদার মোল্লা নামের দলিলে যে স্বাক্ষী দেখানো হয়েছে এমন কারো অস্তিত্ব নেই এই গ্রামে। তাছাড়া মান্নানের পদবী হাওলাদার হলে আবার মোল্লা হয় কীভাবে? এটা যে সম্পূর্ণ জাল-জালিয়াতি তা নামের এই ডবল পদবীই সেটা প্রমাণ করে বলে জানান তারা।
এদিকে এই জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণায় ঘটনায় অভিযুক্ত কাউকেই ঘটনাস্থলে পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় জমির প্রকৃত মালিক জসিম উদ্দিন মামলা দায়েরের পর থেকেই অভিযুক্ত ভূমিদস্যুরা পলাতক রয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। মূল অভিযুক্ত কামরুল হাসান প্রিন্স ওরফে পলাশ তামিদারের বক্তব্য নেওয়ার জন্য তার ব্যবহৃত মোবাইল(০১৭১৬—-০১) নম্বরে ফোন করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। বর্তমানের ডিজিটাল যুগেও এ ধরনের ভয়ঙ্কর জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণা ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন দেহেরগতি ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মশিউর রহমান।
Leave a Reply